স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের আইসিইউ বেড নিয়ে চলছে অঘোষিত দখলদারিত্ব। একবার কোনওভাবে বেড পেলে সেখান থেকে আর কেউ নামতে চাচ্ছেন না। এর মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন স্তরের প্রভাবশালীরা। এতে করে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ রোগীরা। এ অবস্থার অবসানে মেডিকেল থেকে মন্ত্রণালয়ে আরও ১০টি আইসিইউ বেডের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। তবে তা কবে মিলবে তার কোনও উত্তর মিলছে না। আইসিইউ ওয়ার্ডে কর্মরত একাধিক নার্স বলেন, মাত্র ১২টি বেড দিয়ে চলছে ওয়ার্ডটি। করোনার সময় প্রতিদিন কমপক্ষে অর্ধশতাধিক বেডের চাহিদা রয়েছে। যারা মুমূর্ষু শুধু তাদেরই ভর্তি করা হয়। ভর্তি হওয়ার দুই থেকে চার দিনের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী মোটামুটি সুস্থ হন। তখন তারা সাধারণ ওয়ার্ডে অক্সিজেনের মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু যারা একবার আইসিইউ বেডে উঠছেন তারা আর নামতে চান না। রোগী থেকে শুরু করে রোগীর স্বজন, কাউকে বুঝিয়েও কাজ হচ্ছে না। তাদেরকে চাপ সৃষ্টি করলে তারা উল্টো প্রভাবশালীদের দিয়ে ফোন করান। তারা আরও জানান, প্রতিদিন তিন-চারটি বেড দিতে হয় বরিশাল থেকে শুরু করে ছয় জেলায় অবস্থানরত প্রভাবশালীদের সুপারিশে। এসব প্রভাবশালীদের মধ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর ঊধ্র্বতন কর্মকর্তা। সবচেয়ে বেশি সমস্যা করছেন ভিআইপিরা। তাদের রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন না হলেও দিতে হয়। সাধারণ রোগীরাও শেষ পর্যন্ত বেড পাওয়ার জন্য প্রভাবশালীদের মাধ্যমেই সুপারিশ করান। সব মিলিয়ে দারুণ ঝামেলায় আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আইসিইউ ওয়ার্ড সূত্র জানায়, অনেকেই দুইদিনের মধ্যে আশঙ্কামুক্ত হয়ে যাচ্ছেন। এরা যদি সময়মতো বেড ছাড়তেন তবে সাধারণ রোগীকে বাঁচানো যায়। এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেন মেডিক্যালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ জন রোগী আইসিইউ ছেড়ে সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেনে চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু তারা বেড ছাড়ছেন না। সমস্যা সমাধানে আইসিইউ বেডের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। জরুরি বিভাগ সূত্র জানালো, করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে বিভাগের ছয় জেলা থেকেই রোগী আসছে হাসপাতালটিতে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগীর চাপ। যারা আসছে তাদের বেশিরভাগেরই অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে। বেশি দরকার হচ্ছে সিলিন্ডার অক্সিজেনের। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবনিযুক্ত পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ১২টির সঙ্গে আরও ১০টি আইসিইউ বেড এবং ৫০টি সাধারণ শয্যা বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে চাহিদাপত্রও পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত পাওয়া যাবে। এ ব্যাপারে বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপিকা শাহ সাজেদা বলেন, আইসিইউতে চিকিৎসা নেবে মরণাপন্ন রোগী। এ ক্ষেত্রে কোনও সুপারিশ কিংবা জোরাজুরির তোয়াক্কা করা চলবে না। করোনা কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। যারা জোরপূর্বক আইসিইউর বেড দখলে রাখছেন তারা অসুস্থ মনের লোক। তিনি আরও বলেন, এ জন্য প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। সুপারিশ গ্রাহ্য না করে নৈতিকতা দিয়ে দায়িত্ব পালন করলে এমনটি হতে পারে না। এ জন্য মেডিকেল প্রশাসনের অবহেলাই দায়ী। প্রসঙ্গত, গতবছর মার্চে করোনা মহামারি দেখা দিলে তড়িঘড়ি করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গনে নবনির্মিত এক্সটেনশন ৫ তলা ভবনে ২০ শয্যার করোনা ওয়ার্ড গড়ে তোলা হয়। পরে তা ১৫০ বেডে উন্নীত করা হয়।
Leave a Reply